Pages

Thursday, February 16, 2012

সন্তানের নিরাপত্তায় অভিভাবকদের প্রযুক্তি সচেতনতা

সন্তানের নিরাপত্তায় অভিভাবকদের প্রযুক্তি সচেতনতা

- আব্দুল হালিম 

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা নানা প্রয়োজনে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তবে প্রযুক্তির ব্যবহারে যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনি কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। কেননা বর্তমানে প্রয়োজনের তাগিদে কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ঠিকমতো ব্যবহারের সমস্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা সমাধানের জন্যও কম্পিউটার তথা তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ করে আদতে এর কোনো সমাধান হবে না। কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে সন্তানদের আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে অভিভাবকদের কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকাটা জরুরি। কেননা তাদের কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানই সন্তানদের কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। আর এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমেই আপনার সন্তান প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারে। এই অবস্থায় সন্তাদের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের তদারকি করা প্রয়োজন। তাই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ইতি ও নেতিবাচক বিষয় সম্পর্কে সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিশেষ করে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া একান্ত জরুরি।
যে ধরনের সমস্যা হতে পারে
কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শারীরিক কিংবা মানসিক সমস্যার পাশাপাশি সন্তানের লেখাপড়াতে বেশ ক্ষতি হতে পারে। কেননা এক নাগাড়ে অনেকক্ষণ বসে কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে মারাত্মক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। অপরদিকে কম্পিউটারে গেম খেলা কিংবা ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যবহার আপনার সন্তানকে আসক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারেও নানা ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। বিশেষ করে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, অ্যাডাল্ট সাইটের আসক্তি, অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন ছাড়াও নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

অভিভাবকদের করণীয়
কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথমেই কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে কম্পিউটারটি আপনার সন্তান কি কারণে ব্যবহার করছেÑ সেটি বিবেচনা করতে হবে। শুধু বিনোদনের কথা বিবেচনা করে কম্পিউটার কিনে দেয়া ঠিক হবে না।
আবার কখনো একটি কম্পিউটার পরিবারের সবার প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে তথ্য সংরক্ষণ কম্পিউটারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কম্পিউটারে যদি পরিবারের সবার সমান জরুরি হয় সে ক্ষেত্রে সবার প্রয়োজনীয় তথ্যাদি বা ডকুমেন্টগুলোর জন্য আলাদা আলাদা ড্রাইভ কিংবা ফোল্ডারে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও ডাটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত ব্যাকআপ রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় ডাটাগুলো কোনো নির্দিষ্ট ফোল্ডারে রেখে সেটি লুকিয়েও রাখতে পারেন। এছাড়াও ফোল্ডার পাসওয়ার্ড বা ফোল্ডার নিরাপত্তামূলক কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করা যেতে পারে। পিসিতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে প্রয়োজনীয় কাজগুলোর নিয়মিত অনলাইনে ব্যাকআপ রাখতে পারেন।
এছাড়াও অপারেটিং সিস্টেমের প্রয়োজনীয় বুট ডিস্ক তৈরি রাখুন। যাতে বিশেষ মুহূর্তে ব্যবহার করা যায়।
কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য আলাদা আলাদা সময় নির্ধারণ করে দিন। মোট কথা, কম্পিউটার, ইন্টারনেট এবং পড়াশোনার জন্য আলাদা আলাদা সময় নির্ধারণ করে দিন। বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যবহার, চ্যাটিং, গেম খেলা, ইন্টারনেট ব্যবহার ইত্যাদির জন্য আলাদা আলাদা সময় নির্ধারণ করে দিন।
সপ্তাহে কিংবা মাসে দু-একদিন কম্পিউটারের কোনো কাজ না করতে দিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন। আপনার সন্তানের কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেটে আসক্তি আছে কি না। সেদিন যদি দেখা যায় কম্পিউটার ব্যবহার না করলেও তার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তাতে বোঝা যাবে তার কোনো ধরনের আসক্তি নেই।

ইন্টারনেট সংযোগ
বর্তমানে কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ থাকবে নাÑ সেটা তো হয় না। তবে এর সংযোগ এবং ব্যবহারের জন্য কিছু বিষয় মেনে চলুন। যেমনÑ খুব বেশি প্রয়োজন না হলে সার্বক্ষণিক ব্রডব্যান্ড কানেকশনের চেয়ে ডায়ালআপ সংযোগ নেয়াই ভালো। এতে অপ্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবণতা কমবে। এছাড়া পাসওয়ার্ড নিজের কাছে রাখুন- এতে এক ধরনের মনিটরিং ব্যবস্থাও চালু থাকবে। আর ইন্টারনেট প্রভাইডার কিংবা ইন্টারনেট ব্রাউজারের মাধ্যমে ক্ষতিকর ওয়েবসাইটগুলো ব্লক বা বন্ধ করে দিন। প্রয়োজনে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারো সহযোগিতা নিতে পারেন।

সচেতনতা সৃষ্টি ও ভালো কাজের উৎসাহ
কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহার এবং এর বিভিন্ন ভালো-মন্দ বিষয় নিয়ে সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা এবং আইডিয়া শেয়ার করুন। এসব ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের ভালো এবং শিক্ষণীয় বিষয়গুলের ব্যবহার সম্পর্কে উৎসাহী করে তুলুন। যেমনÑ আপনি কোনো ভালো নতুন কিছু শিখলে সন্তানদের শেখান। আবার তাদের কাছ থেকেও নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন। এতে নতুন নতুন কাজ শেখা ও করার প্রবণতা বাড়বে। মোট কথা, কীভাবে ভালো এবং গঠনমূলক কাজে এর ব্যবহার করা যায়Ñ সে বিষয়ে সচেতন এবং শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করুন।

কম্পিউটার ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়গুলো সন্তানের সঙ্গে শেয়ার করুন। একই সঙ্গে কম্পিউটারবিষয়ক বিভিন্ন সফটওয়্যার সংগ্রহ এবং এগুলোর ব্যবহারে সহযোগিতা করতে পারেন। আপনার সন্তান ছোট হলে শিক্ষার হাতেখড়িও হতে পারে কম্পিউটারে খেলতে খেলতে। তবে আতঙ্কে ভরা ও বীভৎস কা-কীর্তিতে পরিপূর্ণ কিংবা নিঃসঙ্গতা রয়েছে এ ধরনের গেম খেলতে না দিয়ে পাজল কিংবা বুদ্ধি খাটিয়ে খেলতে হবে এ ধরনের গেমেই উৎসাহী করে তুলুন।
আরো একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, আপনার সন্তান একটানা অনেকক্ষণ কম্পিউটার ব্যবহার করছে কি না। কেননা এতে তার মারাত্মকভাবে শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তাই সে যেন কম্পিউটারে একটানা বসে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও কম্পিউটার ব্যবহারজনিত চোখের সমস্যা এড়াতে মনিটরে প্রোটেকশন লাগিয়ে দিতে পারেন।

 Source: http://blog.techzoom24.com

No comments:

Post a Comment