Pages

Wednesday, February 22, 2012

বসতবসতি: খোলা হাওয়ায় বসার ঘর

বসতবসতি:

খোলা হাওয়ায় বসার ঘর

কোলাহলময় শহরে একান্ত নিজের মতো করে সময় কাটানোর জায়গার খুব অভাব। এই অবস্থায় আপনি আপনার বারান্দাকে ভিন্নভাবে সাজিয়ে তুলুন, যেখানে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিতে পারেন আপনার অবসর সময়গুলো। প্রতিটি বাসায় থাকে ছোট্ট একটি বারান্দা। যদি আপনি নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারেন তবে এই এক চিলতে বারান্দা হয়ে উঠতে পারে আপনার সময় কাটানোর প্রিয় স্থান। বারান্দার সাজসজ্জার মধ্যে প্রকাশ পায় আপনার সৃষ্টিকর্ম, রুচিবোধ ও ব্যক্তিত্ব। লিখেছেন সাজেদুল ইসলাম শুভ্র


একসময় বারান্দাসজ্জার প্রতি নজর না দিলেও বর্তমান সময়ে অন্দরসজ্জার পাশাপাশি বারান্দাকে সুন্দর করে সাজানোটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বারান্দাসজ্জায় ছিমছাম পরিবেশ আনতে বুদ্ধি খাটিয়ে প্রয়োজনীয় আসবাব ব্যবহার করুন। এ ক্ষেত্রে নিচু সাইজের বিভিন্ন ফার্নিচার বা মোড়া ব্যবহার করতে পারেন, যা অনেক বেশি নান্দনিক ও আরামদায়ক। যারা নিচে বসতে চান তারা নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে বারান্দার এক কর্নারে পেতে দিতে পারেন কাঁথা, কুশন বা শতরঞ্জি। আবার আপনি চাইলে বারান্দায় রকিং চেয়ার বা ছোট একটা দোলনা ব্যবহার করতে পারেন। যাদের বারান্দায় বসে বই পড়ার অভ্যাস আছে, তারা বারান্দার এক কর্নারে বই রাখার তাক রাখতে পারেন, তবে এ ক্ষেত্রে বারান্দার একটি নির্দিষ্ট স্থান বাছাই করুন যেখানে বৃষ্টি পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। তবে কোনো বারান্দায় যদি বৃষ্টির পানি পড়ার সম্ভাবনা থাকে তবে সে বারান্দায় বইয়ের তাক ব্যবহার না করা ভালো। শহরে বড় বারান্দা সহজে মেলে না। অথচ বিকেলে আড্ডা দিতে বা পূর্ণিমায় জ্যোত্স্না দেখতে বারান্দা কতই না ভালো। একটু গুছিয়ে নিলে আপনার ছোট্ট বারান্দাটাই হতে পারে অবসরের প্রিয় জায়গা। বারান্দা হোক ছোট কিংবা বড়, কীভাবে করবেন বসার ব্যবস্থা, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ফারজানা'স ব্লিসের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার ফারজানা গাজী।

 বারান্দায় বসার ব্যবস্থা করতে চাইলে প্রথমে বারান্দাটি খানিকটা উঁচু করে দিন। খেয়াল রাখুন বৃষ্টির পানি যেন গড়িয়ে বাইরে যেতে পারে।

 বারান্দা ছোট হলে কম উচ্চতার ডিভান, ছোট ছোট বেত বা বাঁশের মোড়া ও টুল দিয়ে বসার ব্যবস্থা করতে পারেন। অবসরে বই পড়ার জন্য একটা রকিং চেয়ারও রাখতে পারেন।

 বারান্দা বড় হলে ইচ্ছামতো সাজানোর সুযোগ থাকে। এখানে রাখতে পারেন ডিভান, রড আয়রন, বেত বা বাঁশের সোফা, বারান্দায় রাখা সোফা বা ডিভানে অ্যানামেল পেইন্ট করে নিন। এতে পানিতে ভিজে নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না।

 বারান্দায় ময়লা হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি, তাই ছিমছাম ডিজাইনের ফার্নিচার বেছে নিন। সোফার কভার নিন গাঢ় একরঙা। তবে কুশনগুলো কালারফুল হলেই ভালো। সোফা ও কুশন কভারে একটু সিনথেটিক কাপড় দিন। এতে বেশি ধুলেও কভার নষ্ট হবে না।

 বারান্দার দেয়ালটা সাজাতে পারেন সুন্দর করে। রং করতে চাইলে একটু গাঢ় রঙের ডিস্টেম্পার করুন। ভিন্নতা চাইলে দেয়ালে টেরাকোটা লাগাতে পারেন। আবার প্লাস্টার না করে ইটগুলো শুধু বার্নিশ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ম্যানশন পলিশ করলে দেয়াল ম্যাট দেখাবে, আবার ক্লিয়ার বার্নিশের সঙ্গে রেড অক্সাইড মিশিয়ে দেয়ালে লাগালে চকচকে দেখাবে।

 অনেক সময় বারান্দার মাঝখানে কলাম থাকে। কলামটিকে সুন্দর করে সাজালে তা বারান্দার সৌন্দর্য বাড়াতে পারে অনেকখানি। কলাম সাজাতে ব্যবহার করুন রাস্টিক টাইলস, উডেন প্যানেল, ছোট ছোট আয়না কিংবা ঝোলানো শোপিস।

 বারান্দার ফ্লোরেও বসার ব্যবস্থা করতে পারেন। এ জন্য বেছে নিন শতরঞ্জি, শীতল পাটি বা মাদুর। এর ওপর দিন বিভিন্ন আকৃতির রঙিন কিছু কুশন।

 গাছ ছাড়া বারান্দার সাজ পূর্ণতা পায় না। বিভিন্ন ধরনের ইনডোর প্লান্ট এবং ফুলের গাছ রাখুন বারান্দায়। বারান্দার সামনের অংশে ঝুলিয়ে দিতে পারেন ঝুলন্ত গাছ। খেয়াল রাখুন গাছের টবগুলো যেন দৃষ্টিনন্দন হয়। চাইলে অসুন্দর টবগুলো সুন্দর মাটির পটারিতে ভরে রাখতে পারেন।

 মাটির চাড়িতে পানি দিয়ে তাতে কিছু ফুল এবং মোম দিয়ে রাখুন এক পাশে। দেখতে বেশ লাগবে।

 বৃষ্টি থেকে বাঁচতে বারান্দায় থাই গ্লাস কিংবা বাঁশের চিক ব্যবহার করতে পারেন। কম আলোর বিভিন্ন ধরনের লাইট ব্যবহারে সংকীর্ণ বারান্দা অনেক বেশি সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। রাতের বেলায় বারান্দায় স্নিগ্ধ লাইটগুলোর আলো-ছায়ার খেলায় পরিবেশ হয়ে উঠবে সম্পূর্ণ নান্দনিক ও ভিন্ন আঙ্গিকের। এটা যেমন দেখতে ভালো লাগবে তেমনি আপনার মনের ভেতরে আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করবে। বারান্দায় লাইট ও রঙের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টা করুন, এতে আপনার বারান্দায় অন্যরকম এক পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

তো আর কী? আপনার বাসার বারান্দাকে সাজিয়ে তুলুন একটু ব্যতিক্রমভাবে, যেখানে একান্ত নিজের মতো করে কাটিয়ে দিতে পারেন আপনার দৈনন্দিন জীবনের অলস সময়গুলো।
 
 

No comments:

Post a Comment