Pages

Sunday, February 5, 2012

ঘরের সৌন্দর্যে দেশি পণ্য

ঘরের সৌন্দর্যে দেশি পণ্য















তা সে যেমনই হোক না কেন, নিজের বাসাটি সবার কাছেই প্রিয়। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী সবাই সুন্দর করে সাজাতে চায় প্রিয় বাসাটি। বাসায় আনতে চায় নান্দনিকতার ছোঁয়া। সাজানো ঘর দেখে এর বাসিন্দাদের রুচিও বোঝা যায়। এ জন্য আধুনিক বাসাবাড়ির বাসিন্দারা চিরাচরিত অন্দরসজ্জার ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে আনতে চায় বৈচিত্র্য। আর তা যদি হয় দেশি জিনিসপত্র দিয়ে, তাহলে তো কথাই নেই। বৈচিত্র্যের পাশাপাশি এতে স্বদেশিয়ানাটাও ফুটে উঠবে সুন্দরভাবে। এ জন্য খুব যে কষ্ট করতে হবে তাও নয়। না না, কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থও ব্যয় করতে হবে না। লিখেছেন নুরুজ্জামান মন্ডল

আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রচুর জিনিস আজকাল বাজারে পাওয়া যায়, যা দিয়ে খুব কম খরচে এবং নতুন আঙ্গিকে ঘর সাজান যায়। শুধু একটু মাথা খাটাতে হবে আর সুন্দর জিনিসটি যথাযথ স্থানে রাখতে হবে। সাধারণত ঘর সাজানো দেশি জিনিসপত্র তৈরির উপকরণগুলোর মধ্যে মাটি, বাঁশ, বেত, কাঠ, তামা, কাঁসা, পিতল, পাট, কাপড় বা কাগজ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। দেশি উপকরণ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র বা শোপিসগুলো একদিকে যেমন আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যকে ধারণ করে, তেমনি ঘরে আনে বৈচিত্র্য আর দেশজ আমেজ। আমাদের নিয়ে যায় হাজার বছরের লোকজ সংস্কৃতির কাছাকাছি।

মাটি : মাটির জিনিসে ঘর সাজানো যেন বাঙালিয়ানারই বহিঃপ্রকাশ। আর তাই মাটির তৈরি এসব পণ্যে কখনও টেরাকোটার কাজ করে আবার কখনও বা পোড়া মাটিতে একহারা গড়ন দিয়ে, সৃজনশীলতা ও শৈল্পিকতার সংমিশ্রণ করে তা আরও নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করা যায়। মাটির তৈরি পটারি সবচেয়ে জনপ্রিয়। আগে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের শুকনো খাবার রাখার কাজে পটারি ব্যবহার করা হতো। যুগের হাওয়ার সঙ্গে এ পটারি এখন ঘর সাজানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ঘরের বিভিন্ন কোণে নকশা করা পটারি রাখলে সে ঘরের সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়ে যায়। পটারির মুখে অবশ্য ফুলের টবও বসিয়ে দিতে পারেন। পটারি ছাড়াও মাটির তৈরি হরেক রকমের ঘর সাজানো জিনিসপত্র পাওয়া যায়। ফুলদানি থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বিখ্যাত মানুষের প্রতিকৃতিও মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়। মাটির তৈরি হাজারো রকমের শোপিস রয়েছে। এই যেমন ঘরের দেয়ালে মাটির ফ্রেমের আয়না বসিয়ে দিলে বেশ অন্যরকম একটা আবহের সৃষ্টি হয়। আবার বড় মটকায় সুন্দর করে পেইন্টিং করে তার ওপর গ্লাস বসিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন বসার ঘরের কর্নার টেবিল। মাটি দিয়ে তৈরি এসব পণ্য শুধু ঐতিহ্যকেই ধরে রাখে না, ঘরে নিয়ে আসে দেশজ আমেজ। শুধু তাই নয়, মাটির স্পর্শ আমাদের মনকে ভরে তোলে প্রশান্তিতে।

বাঁশ-বেত-কাঠ : আজকাল বাঁশ, বেত ও কাঠের তৈরি হরেক রকম ঘর সাজানোর জিনিসপত্র পাওয়া যায় বাজারে। মাটির মতো সহজেই ভেঙে যায় না বলে বাঁশ-বেত বা কাঠের তৈরি ঘর সাজানোর নানা উপকরণের কদর একটু বেশি। বাঁশ-বেত দিয়ে ফুলদানি, বুকশেলফ, ল্যাম্পশেড, ওয়ালম্যাট, মোড়া, কলমদানি, খেলনা সামগ্রী, ট্রে, বিভিন্ন রকম চামচ ও খুন্তিসহ নানা ধরনের শোপিস ও শৌখিন জিনিসপত্র তৈরি করা হয়। কাঠ খোদাই করে তৈরি নানা ধরনের ভাস্কর্য দিয়েও ঘর সাজাতে পারেন। এ ছাড়া নানা প্রাণীর মুখাকৃতি, মুখোশসহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ তৈরি করা হয়। বাঁশ বা বেতের তৈরি ল্যাম্পশেডগুলো সুন্দর এবং নজরকাড়া হয়ে থাকে। ঘরের সৌন্দর্যও বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।

তামা-কাঁসা-পিতল : তামা, কাঁসা বা পিতলের তৈরি নানা ধরনের তৈজসপত্র এক সময় আগেকার লোকজন ঘরকন্নার কাজে ব্যবহার করত। সময়ের আবর্তে এখন এসব জিনিস আর ঘরকন্নার কাজে ব্যবহৃত হয় না, ব্যবহৃত হয় ঘর সাজাবার কাজে। তামা, কাঁসা বা পিতলের তৈরি নানা ধরনের শোপিসের মধ্যে বিভিন্ন জীবজন্তু ও প্রতিকৃতি, রিকশা, ফুলদানি, ঘটি, গ্লাস, কলস, পানের বাক্স, সুরাই, সুরাইদানি, মোমদানি, ফুলের টব দেয়ালে সাজানোর থালা, আয়না, ঘণ্টি এসবই উল্লেখযোগ্য।

পাট ও কাপড় : পাট বা কাপড়ের তৈরি বিভিন্ন রকম ঘর সাজানোর উপকরণ রয়েছে। পাটের তৈরি শতরঞ্জি এখন সবার প্রিয়। দেশে তৈরি শতরঞ্জি বিক্রি হচ্ছে বিদেশেও। এ ছাড়া পাট দিয়ে তৈরি শিকা বা দোলনাও ঘর সাজানোর উপকরণ হিসেবে জনপ্রিয়। ঘর সাজাতে পারেন নকশি কাঁথা দিয়েও। বিছানায় ব্যবহার ছাড়াও ফ্রেমে বন্দি নকশি কাঁথা দেয়ালেও টানিয়ে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।

কোথায় পাবেন : মাটির জিনিসপত্রের জন্য বিখ্যাত স্থান হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে দোয়েল চত্বর এলাকা। এ ছাড়া কলাবাগানানেও মাটির জিনিসপত্র পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাঁশ, বেত, তামা, কাঁসা, পিতল, পাট ও কাপড়ের তৈরি বিভিন্ন ঘর সাজানোর উপকরণ পাওয়া যাবে আড়ংয়ের বিভিন্ন শাখায়। এ ছাড়া যাত্রা, পিরান, আজিজ সুপার মার্কেটের আইডিয়াস, আসাদগেটের সোর্স, মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদের কুমিল্লা কেইন সেন্টারসহ বিভিন্ন হ্যান্ডি ক্রাফটসের দোকানে।

আড়ং ছাড়াও তামা-কাঁসা-পিতলের জিনিসপত্রের জন্য রূপসী বাংলা হোটেলের উল্টোদিকে পরীবাগের মার্কেটটিতে যেতে পারেন। সেখানে বেশ কয়েকটি তামা, কাঁসা ও পিতলের তৈরি তৈজসপত্র বিক্রির দোকান রয়েছে। এ ছাড়া চাইলে ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ে বিখ্যাত সেই তামা-কাঁসার গ্রামেও যেতে পারেন।
দরদাম : ঘর সাজানোর জিনিসপত্রের দাম মুখে বলে কুলানো যাবে না। হরেক রকমের জিনিসপত্রের হরেক রকম দাম। ৫০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বা আরও বেশি দামের জিনিসপত্র রয়েছে। আপনার সামর্থ্য আর বাজেট মিলিয়ে ঘর সাজানোর জিনিসপত্র কিনতে হবে। কেনার সময় দরদাম করে নেয়াটা ভালো। কারণ ঘর সাজানোর জিনিসপত্রের দাম একটু বেশিই চেয়ে থাকেন দোকানিরা।

No comments:

Post a Comment