Pages

Saturday, February 18, 2012

ইনডোর প্ল্যান্ট ও সবুজ সবুজ ভালোবাসা

ইনডোর প্ল্যান্ট

-আয়ান রায়হান
 
একটি গ্রামের শিশু, তার ঘুম ভাঙে ভোরের রোদেলা পরশ গায়ে মেখে। চোখ মেলেই সে এক দৌড়ে মিশে যায় সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে। তার বেড়ে ওঠা এই প্রকৃতির হাত ধরে। কিন্তু আমরা শহুরে মানুষ একটি বাক্সবন্দি জীবনযাপন করছি। চার দেয়ালের মাঝে ডিম লাইটের মিটিমিটি আলোতে চোখ বুজতে হয় আমাদের। আর চোখ মেলেই দেখতে হয় মাথার ওপর সিলিং ফ্যান, পাশে টেবিলে রাখা চির সতেজ প্লাস্টিকের ফুল। এক দৌড়ে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। বৃথা চেষ্টা করলেও শক্ত সিমেন্টের দেয়ালের সঙ্গে মিশে যাওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ নেই। প্রকৃতির সদ্য ফোটা গোলাপ ফুল না দেখলেও সরষে ফুল দেখতে পাবেন এটা নিশ্চিত। এবার আসুন আসল কথায়, প্রকৃতির পরশ পেতে হলে কি শহর ছেড়ে ছুটতে হবে গ্রামের পথে? না, ইচ্ছা করলে আপনি আপনার আপন আধারটিকেই দিতে পারেন প্রকৃতির চমত্কার রূপ গাছ-গাছালি আমরা সবাই ভালোবাসি। পরিমিত পরিসরের জায়গাতেও আমরা দিতে পারি আমাদের ভালোবাসার জিনিসটির অবস্থান।
সাজিয়ে রাখুন প্রকৃতির রূপে : যাদের উঠোনের আশপাশে কাঁচা জায়গা রয়েছে তাদের অবশ্যই ভাগ্যবান বলতে হবে। শহরের অনেকেই নিজ বাড়িতে আম গাছ, কলা গাছ, নারকেল গাছ লাগিয়ে থাকেন শখের বসে। যাদের সে সুযোগ নেই তারা বাসার ছাদে রাখতে পারেন টবের গাছগুলোকে। অথবা আপনার ঘরের পাশের বারান্দাটিকেও সাজিয়ে রাখতে পারেন সেঙ্গোনিয়াম, ক্যাকটাস, মানিপ্লান্ট, পাতাবাহার, কসমসসহ বিভিন্ন হ্যাঙ্গিং প্লান্ট দিয়ে। সে শখের ফুল ‘মে ফ্লাওয়ার’। যেন জ্বলন্ত অগ্নিগোলক, আপনার বারান্দার দু’পাশে দুটি রেখে দিন। চমত্কার দেখাবে।
গাছের কেয়ারি : গাছ শুধু লাগালেই হবে না, যত্নও করতে হবে পরিপূর্ণভাবে। গাছটি রাখতে হবে এমন স্থানে যেখানে আলো-বাতাস থাকবে সহনীয় পরিমাণে। দু’বেলা পানি দিতে হবে পরিমাণমত। গাছের জন্য গোবর সার উপকারী, তার পাশাপাশি হাড়ের গুঁড়া, সরিষার খৈল বেশ ভালো কাজ করে। গাছের রোগ-জীবাণু দূর করতে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক রয়েছে। যা পাবেন যে কোনো গাছের দোকানে। সপ্তাহে একবার করে আক্রান্ত গাছে স্প্র্রে করে দিন গাছটির সুস্থ হওয়া পর্যন্ত। তবে হ্যাঁ, স্প্রে করার সময় মুখে মাক্স লাগিয়ে নিন আপনার আত্মরক্ষার জন্য। নতুবা হিতে বিপরীত হতে পারে।
আপনার ঝুল বারান্দাটি সাজাতে গাছ পাবেন শহরের যে কোনো নার্সারিতে। তবে কি গাছ কিনবেন তা নির্ভর করবে আপনার পছন্দের ওপর। গাছ রাখার জন্য টব, ছোট পটারিও কিনে নিন। যেন নতুন কেনা গাছ নিয়ে ঝামেলা পোহাতে না হয়। আপনার অন্দরটি রাখুন সবুজ, পরিপাটি আর সতেজ। ফুলের নানা রংয়ে রাঙিয়ে দিন আপনার আপন ভুবন।

সবুজ সবুজ ভালোবাসা

-রিজওয়ানা আফরিন নীরা
 
সবুজকে কে না ভালোবাসে? সবুজ প্রকৃতির স্নিগ্ধ আবেশে সতেজ হয় মন। ঝরে যায় অবসাদ। সবুজের কোমল পরশ প্রাণচাঞ্চল্য জাগিয়ে তোলে। এর মায়াবী জাদুতে ভেসে যেতে চায় সবাই। তাই প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা মানুষ অনেক বেশি সুস্থ ও সুন্দর। কিন্তু শহুরে ব্যস্ত জীবনের ইট-কাঠের খাঁচায় বন্দি মানুষগুলোর কাছে সবুজ প্রকৃতি ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই অনেকেই এখন প্রকৃতির কাছে ছুটে না গিয়ে প্রকৃতিকেই ডেকে আনছে ঘরে। হ্যাঁ, বাগান করার কথাই বলা হচ্ছে। অনেকে আবার ঘর সাজাতে গিয়ে শো-পিসের পরিবর্তে ছোট গাছকে প্রাধান্য দিচ্ছে। আর যাদের বাড়ির আঙিনা কাচা মাটির তাদের মতো সৌভাগ্য আর ক’জনের আছে। আপনার বাড়িতেও যদি কাঁচা মাটি থাকে অর্থাত্ বাড়ির পাশে আঙিনা বা এক ফালি খালি জমি থাকে তাহলে জেনে রাখুন ঈশ্বরের আশীর্বাদ হিসেবে গাছ লাগানোর জন্যই আপনি ওই অংশটুকু পেয়েছেন। ওই অংশে লাগাতে পারেন আম, নারকেল, সুপারি, বরই ইত্যাদি গাছের চারা। অথবা করতে পারেন সবজি ক্ষেত, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, আলু ও পেঁপে লাগাতে পারেন এ ঋতুতে। সবজি চাষ করলে বাগান করার আনন্দের পাশাপাশি সংসারেরও কিছু সাশ্রয় হবে। এ সুবিধা যারা পাচ্ছেন না তারা বাগান করতে পারেন ছাদে। সারি সারি টপ লাগিয়ে ঋতু অনুযায়ী ফুলের চাষ করুন। গাঁদা, গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা লাগানোর এটাই সময়। লাগাতে পারেন টবে চাষ করা যায় এমন কোনো ফলের গাছ। আম, পেয়ারা, ডালিম, সফেদা, আতা এমনকি আনারস পর্যন্ত মাঝারি আকারের ড্রামে চাষ করা যায়। যারা নতুন বাড়ি বানাচ্ছেন তারা এমনভাবে বাড়ির নকশা করুন যেন ছাদে মাটি ঢেলে পার্কের মতো একটা পরিবেশ তৈরি করা যায় এবং সেখানে গাছ লাগানো যায়। তবে সেটা করলে আপনার আর্কিটেক্টের সঙ্গে কথা বলে সেভাবেই নকশা করতে হবে। যারা আঙিনা বা ছাদ ব্যবহারের আনন্দ থেকে বঞ্চিত তারা ফ্ল্যাটের এক চিলতে বারান্দাকেই কাজে লাগাতে পারে। অল্প আলোয় বেড়ে ওঠে এমন গাছ দিয়ে সাজিয়ে তুলুন আপনার বারান্দা। গ্রিলে ঝুলিয়ে দিন ছোট ছোট লতানো গাছ। রান্না ঘরের জানালায় রেখে দিন মানি প্ল্যান্টের চারা। শো-পিসের পরিবর্তে ড্রয়িংরুম সাজান ক্যাকটাস আর বাহারি পাতাবাহার দিয়ে। আপনার অংশটুকুর সিঁড়ির গোড়ায় রাখুন সুন্দর একটি পাম ট্রি। এতে আপনি থাকবেন সতেজ; আপনার গৃহে থাকবে সুস্পষ্ট পরিবেশ। জায়গার অভাবের দোহাই দিয়ে গাছ লাগানো থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন না। আসুন এই বসন্তে আমরা সবাই হয়ে উঠি প্রকৃতিপ্রেমিক। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের এ ভয়াবহ সময়ে পৃথিবীকে বাঁচাতে যার যার নিজের অবস্থান থেকে পৃথিবীকে সামান্য সাহায্য করি গাছ লাগিয়ে।
 
 
 

No comments:

Post a Comment