বন্ধু চুলা:ব্যবহার ও সুবিধা
বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসেব অনুযায়ী আমাদের দেশে প্রতি বছর ৩২ হাজার শিশু ও
১৪ হাজার মহিলা শুধু রান্নাঘরের ধোঁয়াজনিত রোগের কারণে মারা যায়। তাই
রান্নাবান্নায় প্রচলিত চুলার ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হবার সময় এসেছে।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় নানারকম চুলা প্রচলিত আছে। এসব চুলায় জ্বালানি
পুড়িয়ে যতটুকু তাপশক্তি পাওয়া যায়, তার সামান্য কাজে লাগে। এ চুলা থেকে
সৃষ্ট গ্যাস ও ভাসমান কণা ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। সেই সাথে
দূষণ করে পরিবেশ।
জ্বালানির অপচয়রোধ, রান্নাঘর ধোঁয়া ও দূষণমুক্ত রাখতে এবং ব্যবহারকারীর
সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ উন্নত
চুলা উদ্ভাবন করেছে। জার্মান টেকনিক্যাল কো-অপারেশন (জিআইজেড) এই চুলা আরও
কার্যকর এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য করে সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের
সর্বত্র পৌঁছে দিচ্ছে। এই চুলা ‘বন্ধু চুলা’ নামে এখন সর্বত্র পাওয়া
যাচ্ছে।
বন্ধু চুলা
‘বন্ধু চুলা’ একটি উন্নত চুলা। এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বনে এবং
সহজলভ্য উপকরণে তৈরি। ছাঁকনি, চিমনি এবং টুপি এই চুলার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ছাঁকনির উপর জ্বালানি পোড়ানো হয়। ধোঁয়া চিমনি দিয়ে ঘরের বাইরে চলে যায়।
বন্ধু চুলায় কোনো ঝিকা না থাকায় আগুনের তাপ বেশি কাজে লাগে। ফলে কম
জ্বালানিতে তাড়াতাড়ি রান্না হয়।
বন্ধু চুলা একমুখী, দুইমুখী অথবা তিনমূখী হয়ে থাকে। প্রয়োজনে বন্ধু চুলা
সম্পূর্ন বা অর্ধেক মাটির উপরে বানানো যেতে পারে। বর্তমানে বন্ধু চুলা
কংক্রীট এবং পোড়ামাটির সংস্করণেও পাওয়া যাচ্ছে।
বন্ধু চুলার ব্যবহার
পারিবারিক রান্নার কাজে বন্ধু চুলার জুড়ি মেলা ভার। ছাত্রাবাস, হাসপাতাল,
সেনানিবাস, পুলিশ ফাঁড়ি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান বন্ধু চুলা ব্যবহার করে
জ্বালানি খরচ অর্ধেকে কমিয়ে এনেছে। রেস্তোঁরা, চায়ের দোকান প্রভৃতি
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধু চুলা ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে।
সুতা, রং, চানাচুর তৈরি ইত্যাদি শিল্প কারখানাতেও সফলভাবে বন্ধু চুলা
ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ব্যবসায়িক মুনাফা বৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করছে। মোট
কথা যেখানে শুকনা কাঠ, খড় ইত্যদি জ্বালানি ব্যবহৃত হয় সেখানেই বন্ধু চুলা
উপযোগী।
প্রচলিত চুলার অসুবিধা
প্রচলিত চুলায় অনেকগুলো অসুবিধা রয়েছে। যেমন-এতে জ্বালানি খরচ বেশি হয়,
রান্না হতে বেশি সময় লাগে, রান্নাঘরে ধোঁয়া, কালি ও ঝুল হয় এবং হাঁড়িপাতিল
বেশি ময়লা হয়। সর্বোপরি চুলা ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যহানি ঘটে এবং
রান্নাঘরের পরিবেশ দূষিত হয়। অগ্নিজনিত দূর্ঘটনাও বেশি ঘটে। এছাড়া বেশি
জ্বালানি ব্যবহারের কারণে বৃক্ষনিধন বাড়ছে, ফলে উজাড় হচ্ছে বন। পরিবেশ
হারাচ্ছে তার ভারসাম্য।
বন্ধু চুলার সুবিধা
- জ্বালানি খরচ অর্ধেক কমিয়ে আনে।
- রান্নাঘর ধোঁয়া ও দূষণমুক্ত রাখে।
- চোখ জ্বালা, হাঁপানি, মাথাব্যাথা ও ক্যান্সারের মত রোগের ঝুঁকি অনেক কমায়।
- রান্নাঘর পরিচ্ছন্ন, কালি ও ঝুলমুক্ত থাকে।
- অগ্নিজনিত দূর্ঘটনার সম্ভাবনা কমায়।
- গ্রীন হাউজ ইফেক্ট কমাতে সাহায্য করে।
বিঃ দ্রঃ বন্ধু চুলার উদ্ভাবক বিসিএসআইআর বা বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত । এটি সাইন্স ল্যাবরেটরি নামেও পরিচিত । জনসংযোগ কর্মকর্তা: মোঃ ইছাহাক মোল্লা, ফোনঃ ০২-৮৬২০০২০, ০২-৮৬১৩০২২, মোবাইলঃ ০১৯১১-৯৩০৭১৬, ইমেইলঃ ishakpro@yahoo.com, "বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), ড. কুদরাত-এ-খুদা সড়ক, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৫" ওয়েবসাইটঃ www.bcsir.gov.bd
No comments:
Post a Comment