Pages

Thursday, February 23, 2012

রান্নার কাজে গ্যাস সিলিন্ডার

রান্নার কাজে গ্যাস সিলিন্ডার

 - সাজেন

 

গ্যাস সমস্যা এখন চরমে। খোদ ঢাকার অনেক এলাকায় এখন গ্যাস থাকে না বললেই চলে। আর ঢাকার বাইরে অনেক জেলায় এখনো গ্যাস যায়ইনি। গ্যাস না থাকায় প্রতিদিন বাইরে খাওয়া-দাওয়া করার মতো অবস্থা অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের নেই। তাই কখন গ্যাস আসবে কী আসবে না, এই নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করেই অধিকাংশ বাসার গৃহিণীরা রান্নার কাজে কাঠ কিংবা অন্য জ্বালানি ব্যবহার করে থাকেন। অনেক বাড়িতে আবার কাঠ ও জ্বালানি ব্যবহার করার সুযোগ না থাকায় জ্বালানি হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এলপিজি বা লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস। এই গ্যাস বিশেষ প্রক্রিয়ায় গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তি করে রান্নার কাজে সরবরাহ করা হয়। এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করার আবার একটা সুবিধাও রয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করার সময় প্রতিদিন রান্নাবান্নায় আপনি কতটুকু গ্যাস খরচ করছেন এবং প্রতি মাসে গ্যাসের পিছে কত টাকা খরচ হচ্ছে, তার একটা হিসাব থাকে। ুআর এখনকার সময় সবকিছুর দাম যেমন বেড়ে গেছে, তাই প্রতিদিন রান্নার কাজের ক্ষেত্রেও কিছুটা হিসেব মোতাবেক চলাই ভালো। তাই এবার এলপিজি গ্যাসের কিছু খুঁটিনাটি তথ্য ও দরদাম দেয়া হলো।
গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার পদ্ধতি : রান্নাবান্না করার ক্ষেত্রে আপনারা যে কোনো কোম্পানির এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের দেশের ৪/৫ টি কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে। এসব কোম্পানীর গ্যাস সিলিন্ডার শেষ হবার পর তা ফেরত দিলে নতুন আরেকটি গ্যাস সিলিন্ডার আপনাকে দেয়া হবে।
গ্যাস সিলিন্ডারের দরদাম : সিঙ্গেল এবং ডবল চুলার হিসেবে দু’ধরনের গ্যাস সিলিন্ডার বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। বাজারের যে কোনো কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডারের দাম একই। সিঙ্গেল চুলার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম পড়বে ২৯৫০ টাকা এবং ডাবল চুলার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম পড়বে ৩১৫০ টাকা। শুধু গ্যাসের জন্যই নেয়া হয় ৭৫০ টাকা। ১২ কেজি গ্যাসের দাম নেয়া হয় ৭৫০ টাকা এবং ৩৬ কেজি গ্যাসের দাম নেয়া হয় ২২০০ টাকা। রান্নাবান্না করার সমায় ১২ কেজি গ্যাস দিয়ে প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা রান্না করলে সিঙ্গেল চুলায় আপনি এক মাস রান্নার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাত্ বুঝতেই পারছেন এর কার্যক্ষমতা ৯০ ঘণ্টা। আর ৩৬ কেজি গ্যাস দিয়ে আপনি প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা রান্না করলে সিঙ্গেল চুলায় ৩ মাস রান্না করতে পারবেন। ৩৬ কেজি গ্যাসের কার্যক্ষমতা ২৭০ ঘণ্টা। ৩৬ কেজি গ্যাসের দাম নেয়া হয় ২২০০ টাকা এবং শুধু সিলিন্ডারের দাম পড়বে ৩৩০০ টাকা।
গ্যাস সিলিন্ডার লাগানোর নিয়ম-কানুন : গ্যাস সিলিন্ডার লাগানো তেমন কঠিন কিছুই নয়, খুবই সহজে গ্যাসের চুলার সঙ্গে গ্যাস সিলিন্ডারের সংযোগ লাগিয়ে নেয়া যায়। গ্যাস সিলিন্ডারের সঙ্গে রেগুলেটর, ক্লিপ, রাবার হোম বা পাইপ লাগিয়ে পরে চুলার সঙ্গে সংযোগ দিতে হয়। তারপরও আপনারা যদি নিজে থেকে গ্যাস সিলিন্ডার না লাগাতে চান, তাহলে যে শোরুম কিংবা ডিলারের কাছ থেকে কিনবেন তাদের যে কোনো মিস্ত্রি আপনার বাসায় এসে চুলার সঙ্গে গ্যাস সিলিন্ডারের সংযোগ লাগিয়ে দিয়ে যাবে। তবে মিস্ত্রি ফিটিং চার্জ হিসেবে ৫০ কিংবা ১০০ টাকা দিতে হবে।
ব্যবহারের আগে নিরাপত্তা : হঠাত্ করেই ঘটে যেতে পারে যে কোনো ধরনের বড় দুর্ঘটনা। তাই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করার আগে অবশ্যই কিছুটা নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে। এলপি একটি দাহ্য গ্যাস। একটু যদি সতর্কতা অবলম্বন করেন, তাহলে বিপদ থেকে খুব সহজেই উদ্ধার পাওয়া যেতে পারে। তাই আসুন জেনে নেয়া যাক গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের কিছু সতর্কতা।
* সঠিকভাবে সিল করা হয়নি এমন কোনো সংযোগ স্থান থেকে সহজে গ্যাস বের হয়ে আসতে পারে। তাই ব্যবহারের আগে ও পরে নিশ্চিত হতে হবে গ্যাস বাল্ব ঠিকভাবে লাগানো হয়েছে কি-না। ঘনীভূত এবং অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় এলপিজি বিস্ফোরণের ঝুঁকি থাকে।
* প্রতিদিন নিয়মিত গ্যাস লিক পরীক্ষা করুন, তবে আগুন বা দিয়াশলাই জ্বালিয়ে গ্যাস লিক পরীক্ষা করতে যাবেন না। কারণ এতে আপনি যে কোনো ধরনের বড় দুর্ঘটনার মধ্যে পড়তে পারেন।
* প্রতিদিন নিয়মিত গ্যাস ব্যবহারের পর সিলিন্ডার বা ট্যাঙ্ক বাল্ব বন্ধ রাখুন। এলপি গ্যাস গন্ধযুক্ত। গ্যাসের গন্ধ বের হলে বুঝবেন গ্যাস লিক করেছে। যদি এমন হয় তাহলে রেগুলেটরের সাহায্যে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করুন। চুলা বন্ধ করে আগুনের উত্স সরিয়ে ফেলুন। এছাড়াও সব সময় রান্নাঘরের দরজা-জানালা খোলা রাখবেন।
* গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটর শিশুদের হাতের নাগালের বাইরে নিরাপদ স্থানে ব্যবহার করবেন।
কীভাবে বুঝবেন গ্যাস সিলিন্ডারে কতটুকু গ্যাস বাকি আছে : প্রতিদিন রান্নাবান্না করার পর সিলিন্ডারে কতটুকু গ্যাস আছে তা জানা কিন্তু খুবই জরুরি। কেননা রান্না করার সময় হঠাত্ করে গ্যাস শেষ হয়ে গেল তখন কিন্তু পড়তে হবে দারুণ মসিবতে। সিলিন্ডারে কতটুকু গ্যাস আছে সেটি সিলিন্ডারের ওজন মেপে বোঝা যায়। এলপিজিসহ সিলিন্ডারের ওজন থেকে শুধু সিলিন্ডারের ওজন বাদ দিলে এলপিজির পরিমাণ জানা যাবে। এছাড়াও কিছু সিলিন্ডারে দাগ কাটা থাকে এবং বাইরে স্বচ্ছ পরিমাপক যন্ত্র থাকে। তাপমাত্রার সঙ্গে সঙ্গে রংয়ের পরিবর্তনের মাধ্যমে এর পরিমাণ জানা যাবে। সহজভাবে সিলিন্ডারের বাইরে যতটুকু অংশ ঘামবে, বুঝতে হবে সিলিন্ডারের ভেতর সে পরিমাণ গ্যাস রয়েছে।
যেসব জায়গায় পাবেন : গ্রিন রোড, আলু বাজার, মিরপুর, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, টিপু সুলতান রোড, পোস্তগলাসহ আরও বিভিন্ন মার্কেটের শোরুমগুলোতে পাওয়া যাবে।

No comments:

Post a Comment