Pages

Wednesday, February 15, 2012

শিশুদের চরিত্র গঠনে করণীয়



শিশুদের চরিত্র গঠনে করণীয়

আবুল হোসেন : ‘শিশু কথাটির মাঝেই যেন লুকিয়ে আছে কোমলতা, পবিত্রতা, সুগন্ধ হূদয় নিংরানো একরাশ ভালোবাসা ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক কিছু। শিশুর হাসির মাঝেই মায়ের খুশি লুকিয়ে থাকে।
কথায় আছে— ‘শিশুরা ফুলের মতো পবিত্র।সত্যিই তাই। ফুলের মতো শিশুদেরও সবাই ভালোবাসে, আদর করে। একটি ফুটফুটে মানব শিশু শুধু মানুষের আদরণীয় বসতু নয়, সে তার আশপাশের প্রাণীকুলেরও যেন প্রিয় বস্তু। আর তাইতো আমরা দেখতে পাই গৃহপালিত পশু-পাখি থেকে শুরু করে কুকুর-বেড়ালও শিশুর সঙ্গে খেলা করে। শিশুকে তারা ভয় পায় না, বরং শিশুর প্রতি রয়েছে তাদের অগাধ ভালোবাসা। অনেক সময় দেখা যায় কুকুর বা বেড়ালের গায়ে জড়িয়ে ধরে আঘাত করলেও তারা তাকে কামড় দেয় না, আমাদের বড়দের বেলায় তা সম্পূর্ণ বিপরীত।
আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যত্। আর তাইতো কবি বলেছেন— ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।তাই আগামী দিনের যোগ্য পিতা কিংবা নাগরিক গড়ে তুলতে হলে আজকের শিশুটির আদর যত্নের পাশপাশি তাকে উন্নত চরিত্রের অধিকারী করে গড়ে তুলতে হবে। কেননা চরিত্রই মানুষের অমূল্য সম্পদ, চরিত্রহীন মানুষ পশুর সমতুল্য।
শিশুর চরিত্রকে উন্নত করে গড়ে তুলতে আমাদের প্রথমেই তারশিক্ষারওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তাকে ধর্মীয়, নৈতিক আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। আর এসবের জন্য দরকার পারিবারিক, সামাজিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এর গুরুত্ব অত্যধিক।
পারিবারিক পরিবেশ বা শিক্ষাই শিশুর চরিত্র গঠনের প্রথম প্রধান ভিত্তি। পারিবারিক শিক্ষাই তার ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে যা তার পরবর্তী জীবনের প্রতিটি কাজে প্রকাশ পায়। তাই প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি সদস্যকেই শিশুর সঙ্গে এমন আচরণ করতে হবে যা তার ওপর ভালো প্রভাব ফেলে। যেমন. সবাইকে শিশুর সঙ্গে নরম সুরে কথা বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে। এতে শিশুর মনে সবার প্রতি ভালোবাসা জন্মাবে, ফলে বড়দের আদেশ-উপদেশ সে সহজেই মেনে নেবে। . শিশুর সামনে কখনও খারাপ কথা উচ্চারণ কিংবা কাউকে গালি দিতে নেই। কেননা তাতে খারাপ কথা বা গালি সে সহজে শিখে ফেলবে এবং যখন-তখন সে তা অন্যের ওপর ব্যবহার করবে। . শিশুকমিথ্যা আশ্বাস দিতে নেই এবং তার সামনে মিথ্যা কথা বলতে নেই। এসব করা হলে তার মধ্যে অবিশ্বাস জন্মাবে এবং মিথ্যা বলতে শুরু করবে। যেমনপরীক্ষায় পাস করতে পারলে তোমাকে পুতুল কিংবা সাইকেল কিনে দেব। কিন্তু দেখা গেল সে পরীক্ষায় ঠিকই পাস করেছে অথচ তার অভিভাবক তা কিনে দেননি। এতে তার মনে অবিশ্বাস জন্মাবে এবং কাজের প্রতি উত্সাহ হারিয়ে ফেলবে। আবার দেখা যায়, শিশুর মা অথবা বাবা বললেন— ‘কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে নেই কিংবা কাজের বুয়াকে গালি দিতে নেই।অথচ শিশুর সামনেই তারা প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝগড়া করছেন অথবা কাজের লোককে গালি-গালাজ করছেন। এতে শিশুর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব জন্ম নেবে এবং সেও এক পর্যায়ে মিথ্যা বলা শুরু করবে। . শিশুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজ করতে নেই। জোর করে কিছু করতে গেলে হিতে বিপরীত হবে। যেমনটিভিতে কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান কিংবা নাটক প্রচারের সময় সে পড়তে চাচ্ছে না অথচ তার মা তাকে জোর করে পড়তে বলছেন, এতে শিশুটি মৌখিক পড়া ঠিকই পড়বে কিন্তু তার মন পড়ে থাকবে টিভি রোমের দিকে। এতে পড়া তো হলোই না বরং শিশুটির কোমল মনে এর প্রতিক্রিয়া কয়েক ঘণ্টা থেকে শুরু করে কয়েক দিন পর্যন্ত থাকে যা তাকে কখনও কখনও বিদ্রোহী করে তুলে। . দৈনিক অন্তত কয়েক ঘণটা মা-বাবার তার সন্তানের সঙ্গে কাটানো উচিত। কেননা এতে তার একাকিত্বের শূন্যতা ঘোচানোর পাশাপাশি মা-বাবার প্রতিও গভীর ভালোবাসা জন্মাবে। নতুবা পিতা-মাতার আদর বা সঙ্গ না পেয়ে সে একাকিত্বে ভুগবে যা তাকে নেশার জগতে পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। . শিশুর ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হরে। ধর্মীয় বিধি-নিষেধগুলো নিজেদের মেনে চলতে হবে এবং সন্তানদের ব্যাপারে উত্সাহিত করতে হবে। . শিশুর সামনে বাসার কাজের লোকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে নেই এবং নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করতে নেই। এমন করা হলে সেও নিম্ন-শ্রেণির লোকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং কথায় কথায় বন্ধুবান্ধব কিংবা ভাইবোনদের সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। . শিশুকাল থেকেই সন্তানদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর মনোযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। স্কুল অথবা খেলাধুলা থেকে বাসায় ফেরার পর হাত-মুখ না ধুয়ে খেতে দিতে নেই। প্রতিদিন গোসল করা, দাঁত মাজা সময়মতো নখ চুল কাটা, প্রস্রাব-পায়খানা নির্দিষ্ট স্থানে করা এবং সেখান থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ইত্যাদি নিয়মিত অভ্যাস করাতে হবে। কেননা এতে শিশু নিরোগ স্বাস্থ্যবান দেহের অধিকারী হবে। কথায় আছে— ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।. িশুকে লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস করাতে হবে। যেমননিজের বইপত্র গুছিয়ে রাখা, কাপড়-চোপড় নিজ হাতে ধোয়া ইত্যাদি। এতে শিশুটি পরিশ্রমী আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে। ১০. শিশুর জন্য সুস্থ বিনোদন খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। খেলাধুলায় শিশুর মন স্বস্থ্য ভালো থাকে, এতে প্রচুর ব্যায়াম হয় বিধায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসহ শিশুর শরীর গঠনে বিশেষ সহায়ক।
উপরোক্ত পারিবারিক দিকগুলো ছাড়াও সামাজিক রাষ্ট্রীয় পরিবেশও শিশুদের চরিত্র মেধা বিকাশের উপযোগী হতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে শিশুশ্রম আইন কার্যকরী করে তাদের জন্য বিভিন্ন একাডেমী, পার্ক, শিক্ষালয় চিকিত্সা কেন্দ্র স্থাপন করে এদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই আমরা আগামী দিনের জন্য একটি সুন্দর আদর্শ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।
লেখক: সমাজকর্মী

No comments:

Post a Comment